তারাই ভারতের কাছে বিক্রি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে ভারতবিরোধীদের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, যারা দেশ বিক্রির কথা বলে, তারা হয় বাঁচার জন্য অথবা ‘ইউজ মি’ মানে ’আমাকে ব্যবহার করুণ’ এই নিয়ে রয়েছে।

দুইদিনের দ্বিপাক্ষিক ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে গত শুক্র ও শনিবার নয়াদিল্লি সফর করে করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করার পর শেখ হাসিনা তার কাছে জানতে চান, রেল যোগাযোগ চালু হতে সমালোচনা হচ্ছে কেন?

তখন ওই সাংবাদিক বলেন, ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে বলে রাজনীতিতে আলোচনা আছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে ওজনটা কিসে মাপছে? কোনোকিছু বিক্রি হলে ওজনটা মাপা হয় না! এখন তো ইলেকট্রনিক মেশিন আছে, আগে দাঁড়িপাল্লায় হতো। তো কিসে মেপে বিক্রি হচ্ছে? আর বিক্রিটা হয় কীভাবে?

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এটা তাদের মনে রাখা উচিত। যারা বিক্রির কথা বলে তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছে।

একটা দেশের মধ্যে ট্রানজিট দিলেই ক্ষতিটা কী-এই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর রেল যেগুলো বন্ধ ছিল, আমরা আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। আমাদের ওই অঞ্চলের মানুষগুলো উপকৃত হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ হচ্ছে। আমাদের দেশেও পণ্য আনার সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে।

আমরা বাংলাদেশে কি আমরা চারিদিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবো- এ প্রশ্ন তুলে সরকারপ্রধান বলেন, সেটা হয় না। কোনো দেশ এভাবে পৃথিবীতে থাকে না।

‘আজকে ইউরোপের দিকে তাকান। সেখানে কোনো বর্ডারই নাই, কিচ্ছু নাই। তাহলে কি একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে?,’ প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে তিনি বলেন, ইউরোপে এক সময় বর্ডার পার হতে কাস্টমস ইমিগ্রেশন হলেও এখন সেসবও নেই। তবে সেখানে প্রত্যেকটা দেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। কই, কেউ কারো কাছে তো দেশ বিক্রি করেনি।

‘তো আমরা দক্ষিণ এশিয়াতে কেন বাধা দিয়ে রাখবো? আমাদের দেশে মানুষগুলোর কথা তো চিন্তা করতে হবে। আমাদের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন,’ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপরেও যারা কথা বলে যে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে। এই বিক্রিটা হয় কীভাবে? সেটাই তো আমার প্রশ্ন। আসলে যারা এটা বলে তারা নিজেই ভারতের কাছে বিক্রি করা।

‘কারণ আমরাতো দেখেছি, যখন মিলিটারি ডিক্টেটররা এসেছে। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া; উপরে ভারতবিরোধী কথা বলেছে, আর ভারতে যেয়ে তাদের পা ধরে বসে থেকেছে। এগুলো আমার নিজের দেখা-জানা। কাজেই এ ধরনের কথা বলার কোনো অর্থ হয় না।’

যত ছোটই হোক, আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ এবং সার্বভৌমত্ব, স্বকীয়তা ও বন্ধুত্ব বজায় রেখেই আমরা কাছ করছি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এই যে আমরা, সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম। তো সব থেকে বেশি লাভবান আমাদের দেশের মানুষ। তাদের যোগাযোগ করতে হয়, যেতে হয়। চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্য বা অন্যান্য কাজে; হাটবাজার করতে যায়, আজমির শরিফে যায়।

‘আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রটা তো আরও উন্নত হবে। কাজেই এখানে বিক্রি আমরা করি না, যারা কথা বলে তারা বাঁচার জন্য, অথবা ‘ইউজ মি’ মানে ‘আমাকে ব্যবহার করুণ’ এই নিয়ে বসেই থাকে। এটাই হলো বাস্তবতা,’ বলেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আর যারা সমালোচনা করে, তাদের জানা উচিত, সারা পৃথিবীতে একটিমাত্র মিত্রশক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে।

‘আমাদের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ট্রেনিং পেয়েছে। বিশ্বের যে কোনো দেশই, যারা মিত্রশক্তির সঙ্গে সহযোগিতা করেছে বা মিত্রশক্তি এসে তাদের সাহায্য করেছে তারা কিন্তু সেই দেশ ছেড়ে কোনোদিন ফেরত যায়নি,’ বলেন তিনি।

জাপান, জার্মানসহ বিভিন্ন দেশে মিত্রশক্তিদের অবস্থানের দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। তারা মিত্রশক্তি হিসেবে আমাদের পাশে থেকে যুদ্ধ করে এসেছে। কিন্তু যখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজি হয়েছেন এবং তাদেরকে ফেরত নিয়ে গেছেন।