গাজায় যুদ্ধ চলতে পারে আরো ৭ মাস

টুইট ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় আট মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।

এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বাড়ছে বৈশ্বিক চাপ। তবে ইসরায়েল বলছে, গাজায় চলমান এই যুদ্ধ চলতে পারে আরও ৭ মাস। যদিও এই যুদ্ধ ও বেসামরিক হতাহত নিয়ে ইসরায়েল বৈশ্বিকভাবে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় চলমান এই যুদ্ধ চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি জানিয়েছেন।

বুধবার ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কান-এর সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামাস এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) গোষ্ঠীর সামরিক ও শাসন ক্ষমতা ধ্বংস করতে ‘আরও সাত মাস লড়াইয়ের প্রত্যাশা করছি আমরা’।

আল জাজিরা বলছে, তার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন গাজায় প্রায় আট মাস ধরে আগ্রাসনের পর ইসরায়েল বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে ক্রমবর্ধমানভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পাচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের অন্যান্য ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

সাক্ষাৎকারে হানেগবি মিসরের সাথে গাজার সীমান্তবর্তী শহর রাফাতে ইসরায়েলের চলমান অভিযানের পক্ষেও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ২০০৭ সাল থেকে হামাস গাজাকে শাসন করা শুরু করার পর থেকে সীমান্ত এই অঞ্চলটি ‘চোরাচালানের রাজ্য’ হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি রকেট, প্রতিটি বিস্ফোরক ডিভাইস, প্রতিটি গুলি যে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়েছে তা এই সীমান্ত লঙ্ঘন করেই। এদিকে বুধবার রাতে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরু ফিলাডেলফি করিডোরের ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে নিয়েছে।

মিসর এবং গাজার মধ্যে অবস্থিত এই বাফার জোনটি ১৯৭৯ সালের ইসরায়েল এবং মিসরের মধ্যে শান্তি চুক্তির অংশ হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, আমাদের বাহিনী ফিলাডেলফি করিডোরের অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এদিকে রাফায় ইসরায়েলের আক্রমণ সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিসর। দেশটি বলেছে, এটি শান্তি চুক্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।

আল জাজিরা বলছে, হানেগবির মন্তব্য গাজার ভবিষ্যত এবং এই ভূখণ্ডে ইসরায়েল ঠিক কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

এছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীও সতর্ক করেছেন, ইসরায়েল যাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজায় না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে (নেতানিয়াহু) অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইসরায়েলের হামলা ইতোমধ্যেই গাজার এই শহরে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে। এছাড়া হামলার জেরে ভূখণ্ডের বেশিরভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং সেখানে মানবিক বিপর্যয় ও ব্যাপক ক্ষুধাও সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা অবশ্যই রাফাতে হামাসের শেষ অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোকে নির্মূল করবে।

হামাস অবশ্য তাদেরকে বাদ দিয়ে করা যেকোনও ধরনের যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠী পুনর্ব্যক্ত করেছে, তারা (যুদ্ধের পরও) গাজাতেই থাকবে।