১২০ কিলোমিটার বেগে রিমালের আঘাত

টুইট ডেস্ক : ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খেপুপাড়া উপকূলে আঘাত হেনেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’। আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ভূইয়া রোববার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে

আবহাওয়াবিদ শামীম জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো।

তিনি বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণপশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। আরো উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিলো।

স্বজনদের আনতে স্রোতের তোড়ে প্রাণ দিলো যুবকস্বজনদের আনতে স্রোতের তোড়ে প্রাণ দিলো যুবক
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার ঢাকাসহ সারা দেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ রোববার দুপুরেই উপকূল স্পর্শ করেছিলো। সন্ধ্যা ৬টার পর এর কেন্দ্রভাগ উপকূলে উঠে আসতে শুরু করে।

মোংলা ও পায়রা বন্দরকে আগের মতোই ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আছে।

আর উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আছে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় রিমালউপকূলীয় এলাকা অতিক্রম শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল
আবহাওয়া অফিস বলছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সাবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের আট বিভাগেই দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে।

অতি ভারী বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

বিদ্যুৎহীন ২৫ লাখ গ্রাহক

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার ২৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঝড়ো বাতাসে গাছ পড়ে দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) এক পরিচালক নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে ১৪টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর বিদ্যুৎ কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পরপরই যাতে দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়, সেই লক্ষ্যে প্রত্যেকটি সমিতির কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎহীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও ঝালকাঠি জেলা। এরমধ্যে পটুয়াখালীতে ছয় লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়া বাগেরহাটে ৪ লাখ ৫০ হাজার ও ভোলায় ৪ লাখ ২৫ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

১০ নম্বর বিপৎসংকেত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হয়। রোববার সকালেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। সকালেই পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং এসব জেলার কাছের দ্বীপ ও চরগুলোও ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় রয়েছে।

এর পাশাপাশি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোও এই মহাবিপৎসংকেতের আওতায় রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছিল, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির সময় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।