দুর্নীতির করাল গ্রাসে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ

টুইট ডেস্ক: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ১ হাজার কেভিএ বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ ও ৫০০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপনের জন্য ২০২০ সালের এপ্রিলে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। তবে চার বছর পেরিয়ে গেলেও এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়নি। আরও দুর্ভাগ্যজনক হলো, কাজ শেষ না করেও সমুদয় বিল উত্তোলন করা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলে তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করা হয়।

এই সমস্যা শুধু রাজশাহী নয়, সমগ্র দেশের চিত্রই এমন। কাজ অসমাপ্ত রেখে বিল উত্তোলন করা বা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রবণতা প্রায়ই দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এটি ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় করা হয়, যা সাধারণত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং এতে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের অর্থের অপচয় ঘটে।

প্রকল্পের কাজে গাফিলতি ও দুর্নীতি রোধ করার জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তারা রয়েছেন, যেমন-ওয়ার্ক অ্যাসিসট্যান্ট, এসও, এসডি, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, এসই, অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু সরিষার মধ্যে ভূত থাকলে সেই ভূত তাড়ানো কঠিন হয়ে যায়। সরকারের উচিত এই দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করে জনগণের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। তহবিলসংকট বা অর্থছাড়ে যেসব জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা থাকে, তারও সমাধান করা জরুরি।

দুর্নীতি ও অপচয়ের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে রাস্তা নির্মাণে বিটুমিনের বদলে আলকাতরা ব্যবহার বা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। টেন্ডারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কিছু কোম্পানি ঠিকই তাদের লাইসেন্স বহাল রাখে এবং সময়মতো ব্ল্যাকলিস্ট হয় না।

সমস্যার মূল জায়গা সম্পর্কে অনেকেই জানেন, কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? এমন অপরাধের পরেও অপরাধীরা যখন বুক ফুলিয়ে এলাকায় চলাফেরা করে, তা জাতির জন্য লজ্জাজনক। তাই এই ব্যাপারে স্থানীয় জনগণকে সজাগ, সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। শেষপর্যন্ত এই সকল অপকর্মের ফল তাদেরই ভোগ করতে হয়। অপচয় বা দুর্নীতির অর্থের বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এই ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করা। জনগণের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে প্রকল্পের কাজের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে প্রকল্পের অগ্রগতি এবং কোনো গাফিলতি বা অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগ নিলে উন্নয়ন কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।