মস্তিষ্কে দুই নাসারন্ধ্রের আলাদা গন্ধ প্রক্রিয়া : নতুন গবেষণা

টুইট ডেস্ক : আমাদের নাকের দুই রন্ধ্র আলাদাভাবে কাজ করে ও তারা আলাদাভাবে গন্ধ প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম বলে মনে করছেন গবেষকেরা। কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত, অ্যামেরিকার বিজ্ঞানীদের নতুন একটি গবেষণা মস্তিষ্ক ও ইন্দ্রিয় কীভাবে গন্ধ নিয়ে কাজ করে সে সম্বন্ধে নতুন ধারণা দিচ্ছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, আমাদের মস্তিষ্ক প্রত্যেক নাসারন্ধ্রের ইনপুট আলাদাভাবে প্রক্রিয়া করার পাশাপাশি সামগ্রিক বিষয়টি সমন্বয় করতেও সক্ষম। বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণাপত্রে বলেছেন, ‘ঘ্রাণতন্ত্রে গন্ধ প্রতিক্রিয়া নিয়ে ব্যপক কাজ করার পাশাপাশি মানুষের ঘ্রাণতন্ত্র কীভাবে দুটি নাসারন্ধ্রের তথ্য একসঙ্গে বা আলাদা করে সে নিয়ে খুব কমই জানা গেছে।’

পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যারো নিউরোলজিক্যাল ইন্সটিটিউট ও ওহাইও স্টেইট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা গন্ধ প্রক্রিয়া আরও ভালো ভাবে বোঝার জন্য মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড প্রতিস্থাপন করা ১০জন মৃগী রোগীকে নিয়ে গবেষণা করেছেন।

ট্রায়ালে তিনটি ভিন্ন গন্ধকে বিশুদ্ধ বাতাস ভর্তি কন্ট্রোলারের সাহায্যে রোগীদের একটি বা উভয় নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করানো হয়। কয়েক সেকেন্ড পর রোগীদের জিজ্ঞেস করা হয় নাকের কোন পাশ দিয়ে তারা গন্ধটা পেয়েছেন, ডান, বাম নাকি উভয়? প্রশ্নের উত্তর তাদের মস্তিষ্কে স্থাপিত ইলেকট্রোডের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন গবেষকেরা।

এসময় দলটি দেখতে পায় যখন দুই নাসারন্ধ্রে আলাদাভাবে একই গন্ধ প্রয়োগ করা হয় তখন মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া একই থাকে যা নাসারন্ধ্রের স্বাধীনভাবে কাজ করার ইঙ্গিত দেয়।

একই সঙ্গে দুই নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে গন্ধ নেয়া হলে সেই গন্ধ মস্তিষ্কে দুটি ভিন্ন প্রতিক্রিয়া শুরু করে। দুই প্রতিক্রিয়ার মাঝে অল্প সময়ের পার্থক্য থাকে যার থেকে গবেষকরা ধারণা পেয়েছেন যে মানুষের দুই নাসারন্ধ্র এক সঙ্গে কাজ করে না।

গবেষকেরা গন্ধ সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের সময় চোখ এবং কানের মতো এক জোড়া নাসারন্ধ্র থাকাও যে বেশ কার্যকর তা বুঝতে পারেন। মস্তিস্কের পিরিফর্ম কর্টেক্স (পিসি) নামের এটি অঞ্চলে মস্তিষ্কের এই বিশ্লেষণ ঘণীভূত হয়। পিসিতে গন্ধ অনুভূতির পরিচালনা ও বিশ্লেষণ করা হয়। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো ঘনিষ্ঠভাগে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। যার অর্থ গবেষণার এ ফলে গন্ধের বাইরেও অন্য প্রভাবকের ভূমিকা থাকতে পারে।

আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে ইঁদুর উভয় নাসারন্ধ্রের সাহায্যে গন্ধ নিতে পারে এবং কোথা থেকে গন্ধ আসছে তা শনাক্ত করতে পারে। মানুষের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটে কিনা এবং কীভাবে সময়ের পার্থক্য ও নাসারন্ধ্র গন্ধ কোডিংয়ের জন্য মস্তিষ্কে কাজ করে নতুন গবেষণায় গবেষকেরা তা আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চান। গবেষণা আরও বলা হয়েছে, ‘দুটি নাসারন্ধ্র থেকে উদ্ভূত গন্ধের তথ্য সাময়িকভাবে মানুষের পিরিফর্ম কর্টেক্সে আলাদা করা হয়। আমাদের গবেষণায় পাওয়া ফল ঘ্রাণতন্ত্রে গন্ধ বিশ্লেষণ বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা এও প্রমাণ করে যে, মানুষের পিসি অস্থায়ী পৃথকীকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি নাসারন্ধ্র থেকে সৃষ্টি হওয়া গন্ধের সম্পূর্ণ আলাদা উপস্থাপনা বজায় রাখতে পারে।