সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে চান প্রধানমন্ত্রী
টুইট ডেস্ক: মৌল ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারের সরবরাহ বাড়িয়ে দেশের শেয়ারবাজারকে আরও শক্তিশালী করতে সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (এসওই) বা সরকারি সংস্থা ও সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস জানায়, বৃহস্পতিবার ঢাকার শেরেবাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে এ নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান।
বৈঠকের পর পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সত্যজিৎ কর্মকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থ বিভাগ ও অর্থসচিবকে শেয়ারবাজারে এসওই এবং সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসওইগুলোর নাম নির্দিষ্ট করেননি, তবে অর্থ বিভাগ এবং অর্থ সচিবকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করে এসওই এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে নির্বাচন করতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনকে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, “এতে ওইসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়বে। কারণ তারা শেষ পর্যন্ত তাদের ব্যয় কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। এটি প্রতিযোগিতার মনোভাবও তৈরি করবে এবং তারা (এসওই) তাদের নিজস্ব আয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারি উদ্যোগ এবং সংস্থাগুলোকে পুঁজিবাজারে এবং এইভাবে প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে, যাতে তারা তালিকাভুক্ত হতে পারে।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, একনেক বৈঠকে এদিন মোট ৫ হাজার ৫৬৩ দশমিক ৬৮ কোটি টাকার মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।
অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে আটটি নতুন এবং দুটি সংশোধিত প্রকল্প। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে, বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ২১ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা হিসাবে ৩৬০ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা আসবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া কিছু নির্দেশনা তুলে ধরে সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, প্রয়োজনীয় তহবিলসহ প্রায় সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পূর্ববর্তী নির্দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ৩৩৯টি প্রকল্পের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩৪টি প্রকল্প এই অর্থবছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। যৌক্তিক কারণে বাকি পাঁচটি প্রকল্প চলতি অর্থবছরের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
প্রধানমন্ত্রী নদী ও খালের ওপর সঠিক উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে বলেছেন, যাতে নদীতে নৌযানগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, পাশাপাশি স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত না হয়।
সচিব জানান, খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তার পর্যবেক্ষণে দুটি বিষয় বলেছেন। এগুলো হল- প্রথমে প্রকল্পের শিরোনাম থেকে তার নাম পরিবর্তন করতে হবে এবং একটি ম্যুরাল নির্মাণের খরচ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করতে হবে।
এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্পে তার নাম যুক্ত হলে, তিনি তার অনুমোদন দেবেন না।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চায়না এইড প্রকল্পের জন্য ২৮৪.৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের জন্য নতুন নাম নির্বাচন করতে উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য শর্ত শিথিল করছে কিনা-জানতে চাইলে সত্যজিৎ বলেন, নির্বাহী সংস্থাগুলো থেকে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও পরিকল্পনা কমিশন সময়সীমা বাড়ায়নি। যার ফলে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩৪টি প্রকল্প চলতি অর্থবছরেই শেষ হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যতদিন প্রকল্পগুলো বিলম্বিত হবে, তত বেশি সময় চলে যাবে। এ কারণেই আমরা প্রতিটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে দেখি। কিন্তু, তা সত্ত্বেও অনেক সময় অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যায়।
ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্বের কারণে প্রায়ই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয় মন্তব্য করে সালাম বলেন, সরকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার সাম্প্রতিক অবমূল্যায়ন বিদেশি সাহায্যের প্রকল্পগুলোতে প্রভাব ফেলবে কি না, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিকল্পনা সচিব বলেন, তাৎক্ষণিক প্রভাব নির্ধারণ করা খুবই কঠিন।
এদিন সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হল- প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান পরিষেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প; ব্যয় ১৪৪.০৭ কোটি টাকা, পিরোজপুর ও ঝালকাটি জেলায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; ব্যায় ১,১০০ কোটি টাকা, বরিশাল জেলায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; ব্যয় ১,০০০ কোটি টাকা, টেক্সটাইল ও লেদার সেক্টরে (স্টাইল) স্থায়িত্ব উন্নয়ন প্রকল্প; ব্যায় ৮১.৪৪ কোটি টাকা, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদন পদ্ধতিকে ভেজা থেকে শুষ্ক প্রক্রিয়ায় রূপান্তর প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধনী); ব্যয় বেড়েছে ৫২৭.৭৭ কোটি টাকা, ঢাকা জেলা সার্কিট হাউস বিল্ডিংয়ের পরিবর্তে সার্কিট হাউস বিল্ডিং নির্মাণ; ব্যয় ৩৩৪.৪৬ কোটি টাকা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবগঠিত (৬৩বিজিবি) ব্যাটালিয়নের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (বিজিবি); ব্যয় ২২৩.০২ কোটি টাকা, আরবান রেজিলিয়িন্স প্রজক্ট (ইউআরপি) (তৃতীয় সংশোধিত); ব্যয় ৬.৪০ কোটি টাকা।