নির্বাচন নিয়ে তিন দলকে দেওয়া মার্কিন চিঠিতে যা আছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার পর তিন দলকে শর্তহীন আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকা।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন। পাশাপাশি যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি (থ্রিসি) কার্যকর হবে বলে মনে করিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সোমবার বিকালে জাতীয় পার্টির দফতরে গিয়ে লু’র লেখা চিঠি দিয়ে আসেন। ওই দলের নেতৃত্বকে তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন প্রশাসন চায় দেশের তিন প্রধান দল মুখোমুখি আলোচনায় বসুক। তিন দলকেই একই চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি এক বিবৃতিতে জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না।’
বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিষয়টি মনে করিয়ে বলা হয়, যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি (থ্রিসি) কার্যকর হবে।
শর্তহীন আলোচনার প্রস্তাব এর আগে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও দিয়েছিলেন। জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, বিএনপি সন্ত্রাসী দল। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প কি কথা বলেন, মুখোমুখি বসে বৈঠক করেন? ওঁরা যেদিন করবেন, সেদিন আমি করব।’
অন্যদিকে, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অবিচল। বাংলাদেশের সংবিধানে তেমন সরকারের বিধান নেই। বিএনপি’র দাবি অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি জাতীয় সরকারের অধীনে ভোট করার পক্ষপাতী।
দুটি দাবি এক মনে হলেও কার্যক্ষেত্রে পার্থক্য আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলে ক্ষণকালীন সরকার নয়। তারা দেশের শাসনভার গ্রহণের পর নিজেদের সুবিধা মতো সময় ভোট করাতে পারে। ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভোট করানোর দায়িত্ব নিয়ে দু’বছর ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল।
অন্যদিকে, জাতীয় সরকার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ফল ঘোষণা পর্যন্ত দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। তাতে সব দলের সাংসদদেরই সংসদে প্রতিনিধিত্বের হারে রাখা হয়। বিএনপি’র এমপি’রা গত বছর সংসদ সদস্য পদ ত্যাগ করেন। এখন দেখার শর্তহীন আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে কী বলে বিএনপি।
বাংলাদেশের বিষয়ে গত শনিবার ভারত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়, যা আমেরিকার সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা জানিয়ে দেন, মার্কিন প্রশাসনকে তাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অভিমত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারত মনে করে বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য কোনও দেশের সেখানে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।